কেইস স্টাডি ১

কমলা খাতুন আজ স্বাবলম্বী

মো: মাহবুব আলম হাকিম

আমরা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ঋণ কার্যক্রমের আওতায় নারীদের সামনের দিকে নিয়ে আসছি। অর্থনৈতিক উন্নয়নের লক্ষ্য যদি জীবনজীবিকার মান উন্নয়ন, দারিদ্রবিমোচন, সম্মানজনক কর্মসংস্থান এবং অস্মতা দুরিকরন হয়ে থাকে তাহলে নারীদেরকেই বেশী প্রাধান্য দেওয়া প্রয়োজন। কর্মসংস্থান বঞ্চিত সামাজিক ও অর্থনৈতিক দিক থেকে পিছিয়ে পড়া সংখ্যা গরিষ্ট তারাই। তারাই শিশুদের অত্যন্ত কাছের অবলম্বন। তাই নারীরাই আমাদের ভবিষ্যৎ বাংলাদেশ গড়ার একমাত্র চাবিকাঠি।

বাংলাদেশের দরিদ্ররা সর্বক্ষেত্রেই বঞ্চনার স্বিকার। এর মধ্যে দরিদ্র নারীরাই সকল ক্ষেত্রে সকলের দ্বারা অতিমাত্রায় বঞ্চনার স্বিকার হয়। দারিদ্রতা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য তাকে দু:সহ পরিস্থিতির স্বিকার হতে হয়। এমনি একজন নারী ময়মনসিংহ সদর থানার চরপাড়ার কমলা খাতুন। স্বামী এবং দুই ছেলে মেয়ে নিয়ে ছিল কমলার অভাবের সংসার। স্বামী শহরে নানা রকম কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করতেন আর বাড়ীর সামনে ছোট একটি দোকান ভাড়া দিয়ে মাসে তিনশত টাকা পেতেন। এই দিয়েই অত্যন্ত কষ্ট করে কমলা তার সংসার চালাতেন।

হঠাৎ করে তার স্বামী অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং উন্নত চিকিৎসার অভাবে মারা যান। যার ফলে একেবারেই অসহাই হয়ে পরেন কমলা খাতুন। স্বামী মৃত্যুর সময় রেখে যান ছোট দোকানটি সহ মাত্র দুই শতক জমির উপর একটি ঝড়াজীর্ন বাড়ী। তখন তার ছেলের বয়স ছিল দশ বছর এবং মেয়ের বয়স আট বছর। দিশে হারা কমলা বিভিন্ন জায়গায় ছোটাছোটি করেন কর্মসংস্থানের জন্য। কিন্তু কোন কিছুতেই যেন তিনি পেরে উঠতে ছিলেন না। এমন সময় প্রতিবেশি এক মহিলার পরামর্শে তিনি আসপাডা পরিবেশ উন্নয়ন ফাউন্ডেশন এর একজন উন্নয়ন কর্মীর সাথে সাক্ষাৎ করেন এবং তার সমস্ত ঘটনা খুলে বলেন। উন্নয়ন কর্মী তার সমস্ত ঘটনা শুনে ময়মনসিংহ সদর শাখার শাখাব্যবস্থাপকের সাথে পরামর্শ ক্রমে ০৫-০৭-২০০৯ তারিখে কমলাকে চরপাড়ায় নিবেদীতা মহিলা সমিতির সদস্য হিসেবে ভর্তি করেন। টাকা ফেরত পাওয়ার সম্ভাবনা অত্যন্ত ক্ষিন হওয়া সত্বেও শাখাব্যবস্থাপক তাকে সঠিক দিকনির্দেশনার মাধ্যমে প্রথম দফাতেই পঞ্চাশ হাজার টাকা ঋণ প্রদান করে। নিজস্ব কোন পুজি না থাকায় কমলা পঞ্চাশ হাজার টাকা দিয়েই নিজের মেয়ের নামে গড়ে তুলেন নিঝুম মেডিসিন কর্ণার। প্রতিষ্ঠানি কোন শিক্ষায় শিক্ষিত না হয়েও দশম শ্রেনী পড়–য়া ছেলেকে নিয়ে কমলা চালিয়ে যান তার ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান। এরপর পর্যায়ক্রমে তিনি অষ্টম দফায় চার লক্ষটাকা ঋণ গ্রহন করেন। বর্তমানে কমলার সংসারে কোন অভাব নেই। আছে শুধু সুখ আর সাচ্ছন্দ। এমনি হাজারও কমলার গল্প আছে আমাদের কাছে। যারা আসপাডা পরিবেশ উন্নয়ন ফাউন্ডেশন থেকে ঋণ গ্রহন করে পরিশ্রমের মাধ্যমে নিজেদের ভাগ্যের পরিবর্তন করেছেন।