কেইস স্টাডি ২

অসহায় জোসনা আজ স্বাবলম্বী

মো: মাহবুব আলম হাকিম

জোসনা একজন শপিং ব্যাগ বিক্রেতা তার বয়স ৩৬ বছর। ময়মনসিংহের আকুয়া পশ্চিম পাড়ায় বাস করেন তিনি। জীবন সংগ্রামে তিনি একজন দক্ষকর্মী। জীবনের প্রতিটি সমস্যাকে তিনি মোকাবেলা করেছেন অত্যন্ত দক্ষতার সাথে। স্বামী হারুন অর রশিদের সাথে তার বিয়ে হয় ১৮ বছর বয়সে। পারিবারিক পরিবেশ ছেড়ে নতুন পরিবেশের সাথে খুব সহজেই মানিয়ে নেয় জোসনা। স্বামীর অভাবের সংসারে দারিদ্রতার সাথে যুদ্ধ করে অনেকটাই ক্লান্ত হয়ে পড়েন তিনি। স্বামী হারুন অর রশিদ সালেহা আচার কোম্পানীতে মাত্র আটশত টাকা বেতনে চাকরী করতেন। এরই মধ্যে জোসনা দুই কন্যা সন্তানের মা হন। স্বামীর পাওয়া আটশত টাকা বেতন দিয়ে ভাড়া বাসায় থেকে সংসার চালাতে গিয়ে প্রচন্ড হিমসিম খেতে হয় তাকে। জোসনা ভেবে দেখে এভাবে আর চলা সম্ভব নয়। তাই সে সিদ্ধান্ত নেই তাকেই কিছু একটা করতে হবে।

বাবার বাড়ী থেকে মাত্র ৩০০ টাকা আর্থিক সহযোগীতা নিয়ে তিনি শুরু করেন শপিং ব্যাগের ব্যবসা। বিভিন্ন দোকান থেকে অর্ডার নিয়ে কাগজ দিয়ে শপিং ব্যাগ তৈরি নিজেই সাপ্লাই দিতে থাকেন। কিন্তু পুঁজির পরিমান একেবারেই কম হওয়ায় তিনি দোকানের চাহিদা অনুযায়ী ব্যাগ তৈরি করতে পারে না। এরপর তিনি ০৬-০৯-২০০৯ সালে আসপাডা পরিবেশ উন্নয়ন ফাউন্ডেশন এর ময়মনসিংহ-২ শাখা থেকে সুজন সখি সমিতির সদস্য হয়ে ১ম দফায় ১০,০০০ টাকা ঋণ গ্রহন করেন। শুরু হয় জোসনার নতুন পথ চলা। তিনি আশে পাশের আরও দশজন মহিলাকে ব্যাগ তৈরির প্রশিক্ষন দিয়ে কার্যক্রম সম্প্রসারন করেন। এরপর পর্যায়ক্রমে তিনি বর্তমানে ৭ম দফায় আসপাডা থেকে ৫০,০০০ টাকা ঋণ গ্রহন করেছেন। জোসনা এখন একজন স্বাবলম্বী নারী। স্বামী এখন আর আচার কোম্পানীতে চাকরী করেন না। জোসনার বর্তমানে প্রশিক্ষন প্রাপ্ত কর্মচারীর সংখ্যা ৬৫ জন। যাদেরকে তিনি ১০০ ব্যাগে গড়ে ৪০ টাকা করে মুজুরী প্রদান করেন। জোসনার স্বামী নিজস্ব জ্ঞ্যানের মাধ্যমে ময়মনসিংহ সদর ত্রিশাল, মুক্তাগাছা,ফুলপুর,ফুলবাড়ীয়া সহ বিভিন্ন জায়গায় দোকানদারদের চাহিদা অনুযায়ী শপিং ব্যাগ সাপ্লাই দেন। জোসনার সংসারে এখন আর কোন অভাব নেই। আকুয়া পশ্চিম পাড়ায় দুই শতক জমি কিনে করেছেন হাফবিল্ডিং বাসা। স্বামী সন্তান নিয়ে অত্যন্ত সুখে আছেন তিনি, আর নির্বিগ্নে স্বিকার করেন ঐ সময় যদি আসপাডা পরিবেশ উন্নয়ন ফাউন্ডেশন তার পাশে এসে না দাড়াতো তাহলে কোন ভাবেই তার পক্ষে স্বাবলম্বী হওয়া সম্ভব হতোনা।